Skip to content

ভালো ঘুমের বিজ্ঞানসম্মত কিছু উপায় এক নজরে দেখে নিন

    better sleep

    বিশ্বজুড়ে অনেক মানুষ অপর্যাপ্ত বা অস্বস্তিকর ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন। ধারণা করা হয়, শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই ৫০ থেকে ৭০ মিলিয়ন মানুষ এই সমস্যার শিকার। এমনকি বিশ্বব্যাপী এটিকে মহামারি বলা হয়। সকালে ঘুম ভেঙে উঠে আপনি জানালা দিয়ে আলো এবং পাখির ডাক শুনলেও উঠে যেতে ইচ্ছা করে না, কারণ রাতে আপনার ঘুম ভালো হয়নি।

    এই সমস্যা সমাধানে কিছু মনস্তাত্ত্বিক ও শারীরিক কৌশল রয়েছে, যা আপনার ঘুমের মান উন্নত করতে পারে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও প্রাচীন কৌশলের উপর ভিত্তি করে কিছু গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে, যা আপনাকে গভীর ও প্রশান্তিদায়ক ঘুম পেতে সাহায্য করবে।

    ১. দুই শিফটে ঘুমানো

    মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে আতঙ্কিত হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। আমরা সাধারণত বিশ্বাস করি, আমাদের একটানা আট ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। তবে সবসময় এমনটা হয় না। হাজার বছর আগে মানুষ প্রথমে অল্প সময় ঘুমিয়ে উঠে যেত এবং বিভিন্ন কাজ করত। তারপর ঘণ্টা দুয়েক পর আবার ঘুমাতো। এটি ‘দুই ধাপে ঘুম’ নামে পরিচিত একটি প্রাচীন প্রথা, যা ১৯৯০-এর দশকে ইতিহাসবিদ রজার একির্চ আবিষ্কার করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, এই প্রথা সচেতনতার মাধ্যমে অনিদ্রা সমস্যার সমাধান করতে পারে।

    ২. ঋতুর সাথে ঘুমের পরিবর্তন

    বসন্তে আপনি লক্ষ্য করবেন যে, আপনার বেশি ঘুমের দরকার হয় না এবং সকালে সহজে উঠে যেতে পারেন। গবেষণায় দেখা যায়, গ্রীষ্মের তুলনায় শীতে আমাদের বেশি ঘুমের প্রয়োজন হয়। এক জার্মান সমীক্ষায় দেখা গেছে, লোকেরা জুনের তুলনায় ডিসেম্বরে বেশি সময় র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট (আরইএম) এবং গভীর ঘুম অনুভব করে। আরইএম ঘুমের সবচেয়ে সক্রিয় পর্যায়, যখন আমরা স্বপ্ন দেখি এবং হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়। গভীর ঘুমের সময় শরীরের পেশি ও টিস্যু মেরামত হয় এবং দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি একত্রীকরণ হয়।

    ৩. হালকা ঘুমানোর চেষ্টা করুন

    অনেক দেশে প্রতিদিনের একটি রীতি হল ক্যাটন্যাপ। গবেষণায় দেখা যায়, নিয়মিত হালকা ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। ২০২৩ সালের গবেষণা অনুযায়ী, হালকা ঘুম আমাদের মস্তিষ্ককে দীর্ঘ সময়ের জন্য আকারে বড় রাখতে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্কের বার্ধক্যকে তিন থেকে ছয় বছর বিলম্বিত করতে পারে। এছাড়াও, ক্যাটন্যাপ আমাদের মানসিকভাবে কার্যকরী কাজ করার ক্ষমতা বাড়ায়।

    ৪. মাইক্রোস্লিপের বিপদ থেকে সাবধান

    কিছু ঘুম মাত্র কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয়, যা মাইক্রোস্লিপ নামে পরিচিত। এটি গাড়ি চালানোর সময় ঘটলে গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে পারে। জাপানের একটি ট্রাক কোম্পানির চালকদের ড্যাশক্যাম ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তিন চতুর্থাংশ চালকের সংঘর্ষের আগে মাইক্রোস্লিপের লক্ষণ ছিল। যারা নারকোলেপসিতে ভুগছেন বা পর্যাপ্ত ঘুমাতে পারেন না, তাদের মধ্যে মাইক্রোস্লিপ বেশি দেখা যায়। নিয়মিত মাইক্রোস্লিপ অনুভব করলে এটি অপর্যাপ্ত ঘুমের একটি লক্ষণ হতে পারে।

    ৫. আরাম করে শোয়ার চেষ্টা করুন

    বেশিরভাগ মানুষ বিছানায় একা ঘুমান না। বরং অন্যদের সাথে বিছানা ভাগ করে নেন। এর ফলে আরাম করে ঘুমানো যায় না। এমনকি বিছানায় ল্যাপটপ বা অন্য কোনো বস্তু থাকলেও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।

    ৬. ঘুমের পরিমাণের চেয়ে ঘুমের মানের উপর নজর দিন

    সকলের ঘুমের প্রয়োজন ব্যক্তি অনুযায়ী আলাদা হতে পারে। বেশিরভাগ মানুষ সাত থেকে নয় ঘণ্টা ঘুমান। তবে ঘুমের মানও গুরুত্বপূর্ণ। রাতে ঘুমানোর সময় এপাশ-ওপাশ করার ফলে কম সতেজ বোধ করি। কারণ, আমাদের মস্তিষ্কে সেরিব্রোস্পাইনাল তরল প্রবাহিত হয়, যা জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ পরিষ্কার করে। এই বর্জ্য-ক্লিয়ারেন্স সিস্টেমকে ‘গ্লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম’ বলা হয়, যা প্রতিদিন একই সময়ে সবচেয়ে ভালো কাজ করে।

    ৭. আধুনিক বিছানা ব্যবহার করুন

    বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ নরম বিছানায় ঘুমাতে অভ্যস্ত, যা স্প্রিং ম্যাট্রেস বা মেমরি ফোমের তৈরি হতে পারে। আগে নরম বা আধুনিক বিছানা নিশ্চিত করতে মানুষকে অনেক কষ্ট করতে হতো। আধুনিক বিছানার সুবিধা নেওয়া ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করে।

    একটি মন্তব্য করুন

    আপনাদের গঠণমূলক মন্তব্য আমাদের প্রেরণ যোগায়